জন সংলাপ ডেস্ক:
রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত শনিবার বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি তাৎক্ষণিক শিক্ষকদের নজরে পড়ে। এর পরই দু’পক্ষকে অফিসে ডেকে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। তাদের একে অপরের বুকে বুকও মিলিয়ে দেন শিক্ষকরা। কিন্তু বুক মেলালেও ক্ষোভ পুষে রাখেন শিক্ষার্থী মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফ্ফারি ওরফে পিয়াস এবং মাহাথির হাসান; যা শিক্ষক কিংবা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে বুঝতে দেননি। সেখান থেকে বের হওয়ার পর তিন মিনিটের মধ্যে বহিরাগতদের ডেকে পারভেজের বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তিনি মারা যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পারভেজ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গতকাল সোমবার ভোরে মহাখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো– আল কামাল শেখ, আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্তের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্তেও তাদের নাম উঠে আসে। তিনজনকে গতকাল আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড শুনানিতে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ বলেন, ‘হিরোইজম দেখিয়েছে, জিরো হয়েছে। ওদের (আসামিদের) তো কোনো ক্ষতি নেই; ক্ষতি ওদের বাবা-মায়ের।’ পরে আদালত তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এজাহারনামীয় আট আসামির একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তারা হলো– প্রাইমএশিয়ার শিক্ষার্থী মেহেরাজ, পিয়াস ও মাহাথির এবং সোবহান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজী, রিফাত, আলী ও ফাহিম। বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
পারভেজ হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে গতকাল বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবং কাকলী এলাকায় বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। আসামি প্রাইমএশিয়ার শিক্ষার্থী মেহেরাজ, পিয়াস ও মাহাথিরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের দোকানে শিঙাড়া খাচ্ছিলেন দুই তরুণী। তাদের একজন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পিয়াসের বান্ধবী। তখন পারভেজ সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। তিনি কেন হাসলেন– এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পিয়াসের বান্ধবী। এর পর পিয়াস, মেহেরাজ ও মাহাথিরের সঙ্গে পারভেজদের বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নজরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আব্দুস সালাম মণ্ডলসহ কয়েক শিক্ষক উভয়পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করে দেন।
প্রক্টর আব্দুস সালাম সমকালকে বলেন, ‘মীমাংসার পর ভেবেছিলাম, আর কোনো ঝামেলা হবে না। কিন্তু তারা বের হয়ে যাওয়ার পর ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে বহিরাগতরা এসে পারভেজের বুকে ছুরি মারে।’
ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, হাফপ্যান্ট পরা এক যুবক পারভেজের বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। পুলিশ বলছে, ওই যুবক বহিরাগত। শিক্ষার্থীদের দাবি, তার নাম নাসিম। সে কড়াইলের টিঅ্যান্ডটি ইউনিট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে পারভেজ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছাত্রদল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কিছু ‘সন্ত্রাসী’ ক্যাম্পাসে রক্ষীবাহিনীর মতো সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ ছাত্রদলের। অন্যদিকে পারভেজ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণ্য রাজনৈতিক অপপ্রচারের’ অভিযোগ তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্রদল।
পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ সময় নেতাকর্মীর বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করতে দেখা যায়।
এদিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রদল। এ সময় ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে মুছে ফেলার প্রয়াস’ এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে দুই কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।