স্টাফ রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও:
ঠাকুরগাঁওয়ে ধান ও ভুট্টা এখন মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলেও, কৃষকের চোখে ঘরে তোলা নয় — বরং হারানোর ভয় স্পষ্ট। টানা কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও ঘন মেঘের কারণে জেলার প্রতিটি উপজেলায় ফসল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই বৈরী আবহাওয়ায় কৃষকের পরিশ্রম যেন মাটির সাথেই মিশে যেতে বসেছে।
সদর উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, “ধান পাকতে শুরু করেছিল, কিন্তু বৃষ্টিতে অনেক গাছ পড়ে গেছে। জমিতে পানি জমায় গাছ পচে যাচ্ছে।” শুধু ধানই নয়, একই অবস্থা ভুট্টা ক্ষেতেও। অতিরিক্ত আর্দ্রতায় ভুট্টা গাছে রোগ দেখা দিয়েছে। পাতায় দাগ পড়ে ঝরে পড়ছে, গাছের আগা থেকে শুরু করে গোড়া পর্যন্ত ক্ষতির চিহ্ন।
শ্রমিক সংকট ও জমির কাদা অবস্থার কারণে অনেক কৃষক নিজেরাই নামছেন মাঠে। নারীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। রানীশংকৈলে কাদামাটিতে ধান কাটছেন অনেক নারী কৃষক— সংসার টিকিয়ে রাখার এই লড়াই এখন পরিবারভিত্তিক সংগ্রাম হয়ে উঠেছে।
ঋণের ভারে বিপন্ন ভবিষ্যৎ।অনেক কৃষকই ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। প্রত্যাশা ছিল ভালো ফলনের। কিন্তু আবহাওয়ার এই আচরণ সব হিসাব উলটে দিয়েছে।
চাষি জয়নাল বলেন,“ভেবেছিলাম কিছু লাভ হবে, এখন তো লোকসান থেকে কীভাবে বের হব সেটা ভাবছি।” ফসল মাঠে নষ্ট হওয়ায় ইতোমধ্যে ভুট্টার বাজারদরে প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজিতে ২–৩ টাকা দাম বেড়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, ধান ও চালের দামেও এর রেশ পড়বে।
কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি হচ্ছে। কোথায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সে অনুযায়ী সহায়তা পাঠানো হবে। তবে কৃষকদের বক্তব্য— পরিকল্পনা শুনছেন, কিন্তু হাতে কিছু পাচ্ছেন না। ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে এখন কেবল ফসল নয়, দাঁড়িয়ে আছে কৃষকের ঋণ, ঘাম, আশা আর অনিশ্চয়তা। দ্রুত সহায়তা না এলে শুধু এই মৌসুম নয়, পরবর্তী মৌসুমও চ্যালেঞ্জে পড়বে।