জন সংলাপ ডেস্ক:
বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালে দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (CPC) তে একটি উল্লেখযোগ্য সংশোধনী (অধ্যাদেশ নং-১৮) প্রণয়ন করেছে।
এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য হলো, বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, মামলার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। নিচে সংশোধনীগুলো ধারাভিত্তিকভাবে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হলো:
১. ধারা ২৬: হলফনামা এখন বাধ্যতামূলক
আগে Plaint (আর্জি) দাখিলের সময় হলফনামা দিতে হতো না। এখন থেকে বাদীকে অবশ্যই হলফনামা সংযুক্ত করতে হবে, যাতে মামলার তথ্য বিশ্বাসযোগ্য হয়।
২. ধারা ৩৫এ: মিথ্যা মামলা করলে ক্ষতিপূরণ বাড়ানো হয়েছে
মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের জন্য ক্ষতিপূরণস্বরূপ অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে (আগে ছিল ২০,০০০ টাকা)। এর ফলে হয়রানিমূলক মামলায় আদালত কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে।
৩. ধারা ৫৬: বিশেষ ক্ষেত্রে নারীদের গ্রেপ্তার নয়
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, বয়স্ক, দুর্বল বা গর্ভবতী নারীকে দেওয়ানি মামলায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। এটি মানবিকতা ও নারীসুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৪. ধারা ৯৪এ (নতুন): আদালতের রায় কার্যকর করতে প্রশাসনিক সহায়তা
আদালত এখন রায় বা আদেশ বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ বা প্রশাসনের সহায়তা নিতে পারবে। এটি কার্যকরতা নিশ্চিত করবে।
৫. আদেশ ৫: সমন পাঠানোর আধুনিক পদ্ধতি
সমন এখন মোবাইল মেসেজ, ভয়েস কল বা ইনস্ট্যান্ট টেক্সটের মাধ্যমে পাঠানো যাবে। এতে সময় ও খরচ উভয়ই কমবে।
৬. আদেশ ৭: Plaint-এ বিস্তারিত তথ্য আবশ্যক
আর্জিতে এখন বাদী ও বিবাদীর নাম-ঠিকানার পাশাপাশি ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং ইমেইল অ্যাড্রেস দিতে হবে। এতে পরিচয় নিশ্চিতকরণ সহজ হবে।
৭. আদেশ ১৭: মূলতবীর সংখ্যা কমানো হয়েছে
Peremptory hearing-এর আগে মূলতবীর সংখ্যা ৬ থেকে কমিয়ে ৪ করা হয়েছে। এটি মামলা নিষ্পত্তির সময় কমাবে।
৮. আদেশ ১৮, বিধি ৪: সাক্ষ্য হলফনামা আকারে গ্রহণযোগ্য
সাক্ষীরা এখন মৌখিক জবানবন্দির পরিবর্তে হলফনামার মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারবেন, যা সময় সাশ্রয় করবে এবং প্রক্রিয়া গতিশীল করবে।
৯. ডিক্রি কার্যকরের জন্য আলাদা মামলা প্রয়োজন নেই
ডিক্রি কার্যকর করতে এখন আর আলাদা মামলা করতে হবে না। মূল মামলার মধ্যেই আবেদন করে ডিক্রি কার্যকর করা যাবে Even যদি মূল নথি আপিল বা রিভিশনে থাকে।
এই সংশোধনীগুলো বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার, স্বচ্ছতা, এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা আরও কার্যকর ও দ্রুতবিচারপ্রাপ্ত হবেন। আইন শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী একটি পরিবর্তন।